ডেস্ক রিপোর্ট:
কোপা আমেরিকার পুরোটা জুড়ে নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন লিওনেল মেসি। অবশেষে খোলস ভেঙে ফিরলেন বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার। মেসির অভিজ্ঞতার তেজ এবং তারুণ্যের মিশেলে কানাডাকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়ে কোপার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
আজ বুধবার লাস ভেগাসের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে কানাডাকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠার ম্যাচে গোল করেছেন মেসি ও আলভারেজ। চলতি আসরে দুজনেরই এটি প্রথম গোল।
তবে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ম্যাচের শুরুর দিকেই জোড়া সুযোগ পেয়েছিল কানাডা। কিন্তু কোনটিই লুফে নিতে পারেননি কানাডিয়ানরা। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই সুযোগ হাতছাড়া করে আর্জেন্টিনা। সপ্তম মিনিটে ফের সুযোগ পেয়েছিল তারা। তবে ভুল শটে সুযোগ হারায় কানাডিয়ানরা।
ম্যাচের প্রথম ১০ থেকে ১৫ মিনিট বেশ ভালোই খেলেছে কানাডা। তবে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে আর্জেন্টিনার রক্ষণের সামনে এসে। স্কালোনির দল গুছিয়ে নিতে একটু সময় নিয়ে প্রথম গোল আদায় করে নেয় কুড়ি মিনিট পরই। কানাডার রক্ষণে বক্স থেকে বেশ সামনে দুই ডিফেন্ডার অ্যালিস্টার জনস্টন ও ময়েস বোম্বিতোর মাঝে ওত পেতে ছিলেন আলভারেজ। অপেক্ষা ছিল শুধু একটি থ্রু পাসের।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই সম্ভবত মাঝ মাঠ থেকে বল বাতাসে ভাসিয়ে আলভারেজের সামনে ফেলেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পল। ডান পায়ে বলটি দারুণভাবে রিসিভ করে এক ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে ঠান্ডা মাথায় গোল করেন আলভারেজ। ডিয়েগো ফোরলান, রোমারিও ও মেসির পর চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গোল করলেন ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড।
প্রথমার্ধের ৪৪ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। কানাডার বক্সে ফেলা দি মারিয়ার পাস আলভারেজ ডামি করলে বল পেয়ে যান মেসি। প্রথম টাচে ডিফেন্ডার জনস্টনকে কাবু করে শট নিলেও সেটি পোস্টের বাইরে ছিল। এবার কোপায় নিজের প্রথম গোলটি তুলে নিতে মেসিকে অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।
বিরতির পর ৫১ মিনিটে কানাডা সেই গোলটি হজম করেছে অবশ্য নিজেদের রক্ষণের ভুলে। মেসি বক্সে থাকা অবস্থায় কানাডার এক ডিফেন্ডার রক্ষণে বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে আর অফসাইড নিয়ে ভাবতে হয়নি। এনজো ফার্নান্দেজ বক্সের জটলার মধ্যে শট নিলে মেসি তাতে শুধু পা–টা ছুঁইয়েছেন। বল জালে! কানাডা অফসাইডের অভিযোগ তোলায় ভিডিও রিপ্লে দেখে গোল বহাল রাখেন রেফারি। ব্রাজিলের জিজিনিও–র পর কোপা আমেরিকার ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ছয়টি আলাদা টুর্নামেন্টে গোল করলেন মেসি।
দুই গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পর ৬৮ মিনিটে আরও বাজে পরিস্থিতিতে পড়ে কানাডা। পায়ের চোটে মাঠ ছাড়েন কানাডা তারকা আলফোন্সো ডেভিস। ম্যাচের ৮৯ থেকে ৯০ মিনিটে গোল করার দুটি সুযোগ পেয়েছে কানাডা। ৮৯ মিনিটে বদলি নামা তানি ওলুয়াসারির বক্সের মাথা থেকে নেওয়া শট দুর্দান্তভাবে পা দিয়ে ঠেকান আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে টানা তিনটি বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে স্পেন। তাদের সে রেকর্ডে ভাগ বসানোর পথে শেষ ধাপে এসে পৌঁছাল আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকায় ফাইনালের এই ধাপটা এখন পাড়ি দিতে পারলেই স্পেনের অনন্য সেই কীর্তিতে উচ্চারিত হবে লিওনেল মেসি–আনহেল দি মারিয়াদের নাম।
উল্লেখ্য, ২০২১ কোপা আমেরিকা জয়ের পর ২০২২ বিশ্বকাপও জিতেছে আর্জেন্টিনা। এবারও লাতিন আমেরিকান শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে শিরোপা ঘরে রেখে দেওয়ার সুযোগ স্কালোনির দলের সামনে।
চলমান কোপা আমেরিকায় খুব একটা ছন্দে ছিলেন না লিওনেল মেসি। অবশেষে খোলস ভেঙে ফিরলেন বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার। মেসির অভিজ্ঞতার তেজ এবং তারুণ্যের মিশেলে কানাডাকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়ে কোপার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
আজ বুধবার লাস ভেগাসের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে কানাডাকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠার ম্যাচে গোল করেছেন মেসি ও আলভারেজ। চলতি আসরে দুজনেরই এটি প্রথম গোল।
গোল করে মেসি রেকর্ড বুকেও জায়গা করে নিলেন। কানাডার বিপক্ষে দ্বিতীয় গোলটি আসে মেসির পা থাকে। আর এর সাথেসাথেই আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে যান তিনি। তার জাতীয় দলের হয়ে গোল সংখ্যা এখন ১০৯টি। ইরানের আলী দাইকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে ওপরে উঠেছেন মেসি। দাইর গোল ১০৮টি। মেসির সামনে এখন রয়েছে ১৩০ গোল করা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
জাতীয় দলে ১৮৬তম ম্যাচে এসে ১০৯ গোল করলেন মেসি। কানাডার বিপক্ষে এই গোলের মধ্য দিয়ে ৩৮টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের বিপক্ষে গোল করেছেন মেসি। প্রতিযোগিতামূলক খেলায় গোল পেয়েছেন ২১ টি ভিন্ন দেশের বিপক্ষে।
এদিকে ছয়টি কোপা আমেরিকাতে গোল করে যুগ্মভাবে সবচেয়ে বেশি কোপা আমেরিকাতে গোল করার রেকর্ড গড়লেন মেসি। ২০০৭, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৪ কোপাতে গোল করেছেন মেসি। ব্রাজিলের জিজিনহোও ৬টি কোপাতে গোল করেছিলেন ১৯৪২, ১৯৪৫, ১৯৪৬, ১৯৪৯, ১৯৫৩ ও ১৯৫৭ কোপাতে।
মেসি কোপা আমেরিকার ইতিহাসে তৃতীয় বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে গোল করলেন। তার আগে আর্জেন্টিনার এঞ্জেল লাবরুনা ও মেক্সিকোর রাফা মারকুয়েজ রয়েছেন বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে গোল করার তালিকায়।
জাতীয় দলের হয়ে মূল টুর্নামেন্টে এটি মেসির ২৭তম গোল। তাছাড়া কোপার সেমিফাইনালে এটি তার তৃতীয় গোল। ফুটবল অধ্যায়ে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মেসির গোলসংখ্যা এখন ৮৩৮টি।