আজাদুর রহমানঃ
ধর্ষণের বিচার চেয়ে ২২ মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছিল বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকায় অফিসার পাড়ার এক স্কুলশিক্ষার্থী। ধর্ষণের প্রমাণ মেলে ডাক্তারী পরীক্ষায়। আসামিও স্বীকারোক্তি দেয় আদালতে। কিন্তু ধর্ষণের সময় ধারণ করা ভিডিও নষ্ট করে ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। সেটিও পিবিআইয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়।
এরপর ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও মামলা আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ধর্ষণের আলামত ধ্বংসকারী সেই পুলিশ কর্মকর্তাও আছে বহাল তবিয়তে। ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ধুনট থানার দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা শিল্প এলাকায় কর্মরত।
ন্যায় বিচারের দাবিতে মামলার চার্জশিটের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর কলেজ শিক্ষক বাবা-মা। এমন হতাশা নিয়ে মামলার বাদি ওই ছাত্রীর মা কলেজ শিক্ষিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাজির হয়ে ধর্ষক ও ওসি’র বিরুদ্ধে অভিযোগের ন্যায় বিচার চেয়ে একটি আবেদন করেছেন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দাখিলকৃত ওই আবেদনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের প্রার্থনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষিকার আবেদনের প্রাপ্তিস্বীকার করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩ মার্চ বেলা ১১টার দিকে মেয়েটিকে নিজ ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক মুরাদুজ্জমান। মুরাদুজ্জামান উপজেলার শৈলমারী গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে। শুধু ধর্ষণই নয়, ধর্ষণের কিছু আপত্তিকর দৃশ্যও মুঠোফোনে ধারণ করে সে। এ ঘটনায় মুরাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১২ মে সকালে ধুনট থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা।
মামলার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। আর ১৯ মে প্রধানমন্ত্রী বরাবর নিজ হাতে চিঠি লেখে নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রী। আসামি মুরাদুজ্জামান বগুড়া কারাগারে আটক রয়েছে। পরবর্তীতে ওই বছরের ২ আগস্ট ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করেন মামলার বাদি।
তিনি বগুড়া পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু অভিযোগের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় অসন্তুষ্ট হন ভুক্তভোগীর মা। একপর্যায়ে ২৮ আগস্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে মামলা ও ওসির বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ তদন্তভার দেওয়ার দাবি জানান তিনি। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণ মামলা ও ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি দেখছেন পিবিআই পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির।
মামলার বাদি স্কুলছাত্রীর মা বলেন, মামলার শুরু থেকে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আমাদের সঙ্গে অন্যায় করেছেন। ধর্ষণের আলামত ভিডিও নষ্টের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। মামলার পরে মেডিকেল রিপোর্টেও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামি আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। তাহলে তো মামলার তদন্তের আর কিছু বাকি নেই। তারপরেও চার্জশিট মিলছে না।
কারণ, জানতে গেলে কৃপা সিন্ধু বালার নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট নেওয়ার কথা জানানো হয় আমাদের। এটা যদি হয় তাহলে তো মামলার আর কিছুই থাকলো না। তাই প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে ন্যায় বিচার চাইবো।
এ বিষয়ে বগুড়ার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির বলেন, স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলা ও ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে একই সাথে মামলা ও অভিযোগের পৃথক দু’টি প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।