আজাদুর রহমান:
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় মথুরাপুর ইউনিয়নের হিজুলী গ্রামে ফজর আলী (৫৬) নামে এক কৃষকের বিরুদ্ধে নির্মাণ শ্রমিকের মেয়ে (১৫)’কে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ফজর আলীর বিরুদ্ধে মেয়েটির বাবা বাদি হয়ে ধুনট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ দায়েরের পরেও এ ঘটনায় গ্রাম্য সালিস বসানো হয়। আর অভিযুক্ত কৃষকের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় কিশোরীর পরিবারকে তিরস্কার করে বৈঠকে কিশোরীর ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮০ হাজার টাকা। ওই টাকা মেয়েটির বাবার হাতে বুঝে দিয়ে অভিযোগটি জোরপূর্বক আপোষনামা করা হয়। সোমবার রাতে ধুনট থানার এসআই অমিত বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মেয়েটির বাবা বাদি হয়ে ফজর আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগটি তদন্তের আগেই উভয়পক্ষ থানায় আপোষনামা জমা দিয়েছেন। এ কারণে ঘটনাটির কোন খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। থানায় অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হিজুলী গ্রামের আজগর আলী শেখের ছেলে ফজর আলী। একই এলাকার নির্মাণ শ্রমিকের মেয়েকে ফজর আলী প্রায়ই কু-প্রস্তাব ও উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এ অবস্থায় ১৫ জুন দুপুরের দিকে মেয়েটি ঘর মোছার কাজের জন্য বাহিরে মাটি আনতে যায়। এসময় ফজর আলী মেয়েটিকে তুলে নিয়ে পাট ক্ষেতের ভিতরে ধর্ষণের চেষ্টা চলায়। তখন মেয়েটির চিৎকারে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে আসলে ফজর আলী পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মেয়ের পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করে ফজর আলী ও তার লোকজন। এক পর্যায়ে ১লা জুলাই মেয়েটির বাবা বাদি হয়ে ফজর আলীর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় ঘটনাটি নিয়ে ৩ জুলাই তোফায়েল আহম্মেদের বাড়িতে সালিসী বৈঠক বসে। সেখানে ফজর আলী দোষি সাব্যস্ত হওয়ায় মাতব্বরা মেয়েটির ইজ্জতের মূল্য নির্ধারণ করেন মাত্র ৮০ হাজার টাকা। বৈঠকের একদিন পর মেয়ের বাবাকে ৮০ হাজার টাকা বুঝে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে মেয়েটির বাবা জানান, গ্রামের মাতব্বরদের মুখের ওপর কোন কথা বলতে সাহস পাইনি। এ কারণে ৮০ হাজার টাকা নিতে বাধ্য হয়েছি। এ বিষয়ে কৃষক ফজর আলীর সাথে যোগাযোগ করে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ফজর আলীর ছেলে হাসান শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। ধুনট উপজেলার হিজুলী গ্রামে সালিস বৈঠকের মাতব্বর তোফায়েল আহম্মেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বৈঠকে সবার সিদ্ধান্তে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেওয়া হয়েছে। আর গরিব মেয়েটিকে অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করার খরচ বাবদ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ধুনট থানার উপ-পরিদর্শক অমিত জানান, লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল কিন্তু আমি ছুটিতে ছিলাম তদন্ত করার আগেই স্থানীয়ভাবে আপোষ করে থানায় আপোষনামার নাম্বার কাগজ দিয়েছে। আপোষের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।