আজাদুর রহমান:
রাত পোহালেই বুধবার চতুর্থ ধাপে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের বগুড়ায় ধুনট, শেরপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার নির্বাচন। নির্বাচন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলাম জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম থাকবে। ভোট কেন্দ্রে কোন উশৃঙ্খলতা সহ্য করা হবে না। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এ উপজেলায় রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৩৪ (পুরুষ), ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৮৭ (মহিলা) ও তৃতীয় লিঙ্গের ৩ জনসহ মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩২৪ জন ভোটার। উপজেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯০টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে রয়েছে ৬৮৭টি বুথ। আছে ৯০ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও ৬৮৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। পোলিং অফিসার রয়েছে ১ হাজার ৩৭৪ জন।
জেলা পুলিশ সুপার (পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, তিন উপজেলার ভোট কেন্দ্রে পুলিশ সদস্য ছাড়াও সাদা পোষাকে থাকবে ডিবি পুলিশ। ৫৭ টি মোবাইল পেট্রোল ও স্ট্রইকিং ফোর্স থাকবে।
দুপুর থেকে ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন সামগ্রী কেন্দ্রে পৌঁছাতে শুরু করেছে। উপজেলা পরিষদ থেকে উপকরণ সামগ্রী ট্রাকে করে প্রতিটি কেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। বুধবার ভোট গ্রহনের পূর্বে ব্যালট পেপার পৌঁছে যাবে এমনটি জানান জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মাহমুদ হাসান।
জেলার ধুনটে উপজেলার নির্বাচন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর পরই ঐ রাত থেকে সর্বত্র ব্যানার, পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। চেয়রম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ-মহিলা) সরব হয়ে উঠেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের একজন অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন আচারণ বিধি লংঘনের অভিযোগ করেছেন। অনেক প্রার্থী ঈদুল ফিতরের আগে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার টানিয়েছেন। তবে তাতে ভোট প্রার্থনা করার কোন বিষয় ছিল না।
জেলার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ধুনটে উপজেলা। আগামীকাল ৫ জুন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ধুনট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে হেভিওয়েট ৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এরা হলেন বগুড়া ৫ আসনের সাবেক সাংসদ হাবিবর রহমানের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল সনি (আনারস), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টিআইএম নুরুন্নবী তারিক (ঘোড়া), সহ-সভাপতি আব্দুল হাই খোকন (মোটরসাইকেল)।
এছাড়াও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুলতানা জাহান (সেলাই মেশিন), নাজনীল নাহার (হাঁস), পপি সাহা (কলস), রেবেকা সুলতানা (ফুটবল), সীমা আক্তার (প্রজাপতি), ভাইস চেয়ারম্যান পদে অমৃত কুমার সাহা (মাইক), চপল মাহমুদ (টিউবওয়েল) ও ইকবাল হোসেন (তালা) প্রতিকে নির্বাচন করছেন।
সোমবার বিকেল ৩ টার দিকে ধুনট উপজেলার চিকাশি ইউনিয়নের জোড়শিমুল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আব্দুল হাই খোকন ও টিআইএম নুরুন্নবী তারিকের নির্বাচনী সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ওই মাঠে সকাল থেকেই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করে। এ ঘটনায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
উপজেলার সকল প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াতে শুরু করেছেন। ত্রিমুখি প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা বেশি। শেষ হাসি হাঁসবে নির্বাচনের ফলাফল দেখে।
এদিকে সোমবার ৩ জুন বিকেলে সোনাহাটা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র সহ উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
তিনি নির্বাচনী কেন্দ্রে বিভিন্ন দায়িত্বে মোতায়েনকৃত অফিসার-ফোর্সের ডিউটি তদারকি এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম, (অপরাধ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতি প্রাপ্ত) আব্দুল রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) সজীব শাহরীন, ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈকত হাসান, তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সহকারী রির্টানিং অফিসার ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান জানান, আগামী ৫ জুন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত উপজেলার ৯০টি ভোট কেন্দ্রের ৬৮৭ টি কক্ষে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩২৪ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। স্থানীয় প্রশাসন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধ পরিকর। ভোটার ও সুষ্ঠ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আনসার, পুলিশ, বিজিপি মোতায়েন করা হয়েছে।