আজাদুর রহমান:
রাত পোহালেই শুরু হবে আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপে বগুড়ায় গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে একই দলের প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় দীর্ঘদিনের দলীয় ক্রন্দল এবং রাজনৈতিক শত্রুতার বসত অধিকাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে ভোটাররা।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি থাকলেও বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবে না মর্মে দলীয়ভাবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ হাটে-বাজারে লিফলেট বিতরণ এবং নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই সরকারদলীয় প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যেই দলীয় ক্রন্দল তৈরি হতে পারে এবং ভোট কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে ভেবে ভোটকেন্দ্রে যাবে না সাধারণ ভোটাররা।
সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করেন। প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা সরঞ্জামগুলো বুঝে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন।
বগুড়া জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও অন্যান্য ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে। গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ছাড়াও আর্মড পুলিশ, আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রের বাইরে ও নির্বাচনি এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও বিজিবি সদস্যরা টহল দেবেন।
সারিয়াকান্দিতে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে দুই জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তারা হলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সালাম (মোটরসাইকেল) এবং উপজেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আশিক আহম্মেদ (হেলিকপ্টার)।
বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম মন্টু (কাপ পিরিচ), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক কর কমিশনার মােঃ শাহজাহান আলী (ঘোড়া) এবং সাংসদ পুত্র মােহাম্মেদ সাখাওয়াত হোসেন সজল (আনারস)।
অন্যদিকে সোনাতলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন এমপি সাহাদারা মান্নানের ছোট ভাই বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী মিনহাদুজ্জামান ওরফে লিটন। এখানে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।
তাছাড়া গাবতলীতে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন আবারো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে নেমেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ অরুণ কান্তি রায় সীটন।
গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর ইউনিয়নের দুলাল হোসেন নামের এক আওয়ামীলীগ সমর্থিত ভোটার জানান, যেহেতু দুইজনেই আওয়ামী লীগ করে আমরা যাকে যোগ্য মনে করব তাকেই ভোট দিব। তবে আমরা কেন্দ্রের কোন সমস্যা চাই না, যাতে সাধারণ মানুষ ভালোভাবে ভোট দিতে পারে আমরা সেটাই আশা করি।
সোনাতলা উপজেলার আনোয়ার হোসেন নামে এক যুবদল নেতা জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্দেশনায় আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি, সবাই আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে আমাদের কোন প্রার্থী নাই আমরা ভোট দিতে যাব না।
সারিয়াকান্দি উপজেলার একজন আওয়ামীলীগ সমর্থিত ভোটার জানান, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে সবাই আওয়ামীলীগ করে। কাকে ছেড়ে কাকে ভোট দিব তারপরেও চিন্তা ভাবনা করে যাকে যোগ্য মনে করব তাকেই ভোট দেওয়া উচিত। তবে কেন্দ্রের যে রকম পরিবেশ তাতে মনে হয় বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।
অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আবু ছাইদ, রবিবার সভাকক্ষে আলোচনা সভায় বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাবে এবং ভোট দেবে, কেউ আইন-শৃঙ্খলার ব্যাত্তয় ঘটালে তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।