৪০০ কোটি টাকার শুকনা মরিচ উৎপাদনের আশা
রওশন জাহান রুম্পা ও আজাদুর রহমান যমুনার চর থেকে ফিরে :
বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে নদী যমুনা নদী। নদীর বুকে মাইলের পর মাইল বিশাল চর। পরিত্যক্ত সেই চর গুলোতে চাষ হচ্ছে লাল মরিচ। বগুড়ার যমুনা বিধৌত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, উপজেলার কৃষকের উঠানে টিনের চালে, যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে এখন শুধুই লাল মরিচ আর মরিচ। বগুড়ার এই লাল মরিচের বিশেষ সুখ্যাতি থাকায় দেশের মসলা প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মরিচ ওঠার আগেই কৃষকের কাছে নিজেদের প্রয়োজনমত আগাম বুকিং কওে থাকে। মৌসুমের এই সময়টাতে খুবই ব্যস্ত সময় পার করেছে মরিচ শুকানো কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা। জেলায় এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি অফিসার ফরিদ উদ্দিন জানান, এবার প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার শুকনা ও ২০০ কোটি টাকার টোপা/কাঁচা মরিচ উৎপাদনের আশা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। সব মিলিয়ে এই মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার মরিচ পাওয়া যাবে বলে জনানা এই কৃষি কর্মকর্তা। বর্তমান বাজারের চেয়ে যদি মূল্য বেড়ে যায় তবে তা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সরেজমিন শনিবার যমুনা বেষ্টিত সারিয়াকান্দির চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায় মরিচের গাছ থেকে পাকা মরিচ উঠাতে ব্যস্ত শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিকরা। মরিচ নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে চরাঞ্চলে।
এ ছাড়া জেলার গাবতলী, সোনাতলা শাজাহানপুর ও ধুনটেও মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। পলি পড়া চরে মরিচেই ভাগ্য ফিরেছে মরিচ চাষিদের। জেলায় এ বছর ৬৫০০ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৫২৫ টন।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায় এবার ৭৫০০ টন শুধু শুকনা মরিচ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। স্থানীয় বাজার গুলো ঘুরে দেখা যায় বাজারে এখন প্রতিকেজি শুকনা মরিচ সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে মরিচের বাজার উর্ধমুখী। প্রতিদিন বাড়ছে মরিচের দাম। সেক্ষেত্রে মরিচের বিক্রি মূল্য হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বিভিন্ন মসলা কোম্পানী কোম্পানিগুলো মরিচ কেনার জন্য কৃষকদের আগাম অর্থ দিয়েছে। তারা ভালো জাতের মরিচ সংগ্রহ করতে সারিয়াকান্দির চরে ডেরা বেঁধেছে। কোম্পানির লোকজন শুকনা মরিচ সংগ্রহে বেশ ব্যস্ত। চর চালুয়াবাড়ির কৃষক আজমল হোসেন জানান এখন মসলা কোম্পানীগুলো চরে আসায় সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর শুকিয়ে যাওয়া নদীর বালি পার হয়ে দুর্গম চর থেকে আর সারিয়াকান্দির সদরে মরিচ বিক্রি করতে হয় না।
চর ময়ুরীর কৃষক হামিদ জানান কোম্পানিগুলো আমাদের উঠান থেকে বস্তা ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে কষ্ট লাঘব হচ্ছে। ঢাকা থেকে মরিচ কিনতে আসা স্কাই ট্রেড এর প্রতিনিধি খালেদ সিদ্দিকী জানান সারা দেশের মধ্যে বগুড়ার মরিচ স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। তাই আমরা কৃষকদের আগেই কিছু টাকা দিয়ে রাখি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান , মরিচের জন্য বিখ্যাত সারিয়াকান্দিতে বরাবরের মতো এ বছরও মরিচের আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তিনি জানান কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর মরিচ চাষের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।