আজাদুর রহমান:
২৫ মার্চ সোমবার ইফতারের পর বগুড়া সদর থানার সামনে দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় হটাৎ চোখ আটকে গেল এক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধের উপর। বৃদ্ধ সোজা হয়ে হাঁটতে না পেরে, দুই হাতের বগলের নিচে ক্রেচের উপর ভর দিয়ে, পিঠে এক বোঝা ঝাড়ু নিয়ে রুকুতে যাওয়ার মত করে অতি কষ্টে হাঁটছেন।
দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম মুরুব্বী কোথায় যাচ্ছেন? তিনি জানালেন ঝাড়ু বিক্রি করছি। বললাম আপনার এই অবস্থাতে আপনি তো সোজা হয়ে হাঁটতেই পারছেন না, তারপরেও পিঠের উপরে ঝাড়ুর বোঝা নিয়ে হাঁটছেন, এভাবে কি ঝাড়ু বিক্রি হয়? তিনি বলেন মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করতে আমার ভালো লাগেনা, আমি ব্যবসা করে খাই, আল্লাহ যা দুই চার টাকা রোজগার দেন এটাতেই কষ্ট করে চলি। গত বছর বগুড়ার হৃদয়বান কয়েকজন ছেলেরা মিলে আমার এলাকায় একটি পান, সিগারেটের দোকান করে দিয়েছিলো, কিন্তু দোকানে বেচাকেনা খুবই কম থাকায় বাধ্য হয়ে আমি ঝাড়ু বিক্রি করতে বগুড়া শহরে এসেছি। এতে কেমন রোজগার হয় জানতে চাইলে তিনি জানালেন দিনে ৮ থেকে ১০ টি ঝাড়ু বিক্রি হয়, এতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মত লাভ হয়, পাশাপাশি ৩ মাস পর পর ২৫০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পান এতেই খেয়ে না খেয়ে চলে সংসার।
তার সাথে কথা বলে জানা গেল নাম জহুরুল (৬০), পিতা মৃত ধনাই প্রামাণিক। জন্মস্থান সারিয়াকান্দি উপজেলার করর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের, মথুরাপারা গ্রামে। বাড়িঘড় যমুনার ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে। বর্তমান বসবাস করেন নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের, হাটকড়ই এলাকার, রায়পুর গ্রামের আদর্শ পারায়, সরকার প্রদত্ত গুচ্ছ গ্রামের একটি কুঁড়ে ঘরে। ১৫ বছর পূর্বে সড়ক দুর্ঘটনায় কোমরের হাড় ভেঙ্গে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সাথে ছিলেন তার ছেলে, তিনিও পঙ্গুত্ব বরণ করে কোন কাজ করতে পারেনা। জহুরুলের ৩ ছেলে ১ মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, ৩ ছেলে দিনমজুরের কাজ করে, মূল্য বৃদ্ধির এই বাজারে তাদের নিজেদের সংসার চলাতেই হিমশিম অবস্থায় পরতে হয়। তাই তিনি চরম অসুস্থ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী দুজনের সংসারের ঘানি টানতে ঝাড়ু বিক্রির জন্য পথে নেমেছেন।